ফ্রান্সে আশ্রয় আবেদনের বর্তমান পরিস্থিতি

Publié le 31 octobre 2024 à 13:31

ফ্রান্সে আশ্রয় প্রার্থনার জন্য আবেদনকারীদের সংখ্যা বিগত কয়েক বছরে উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে। আন্তর্জাতিক সংকট, রাজনৈতিক অস্থিরতা এবং বিভিন্ন দেশে চলমান যুদ্ধের কারণে ইউরোপের অনেক দেশ আশ্রয়প্রার্থীদের জন্য গন্তব্যস্থল হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে, যার মধ্যে ফ্রান্স একটি অন্যতম। আশ্রয়প্রার্থীদের অধিকাংশই যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশগুলো থেকে এসেছেন, যেমন সিরিয়া, আফগানিস্তান, ইরাক এবং আফ্রিকার বিভিন্ন দেশ।

আশ্রয় আবেদন প্রক্রিয়া

ফ্রান্সে আশ্রয় আবেদনের জন্য নির্দিষ্ট কিছু ধাপ রয়েছে। প্রথমত, আশ্রয়প্রার্থী ফ্রান্সে প্রবেশের পর একটি অফিস দে ল’ইমিগ্রেশন এবং দে ল’ইন্টেগ্রেশন (OFFI) অফিসে রেজিস্ট্রেশন করেন। তারপর তাদের ফ্রান্সের আশ্রয় অধিকার এবং দায়িত্ব সম্পর্কে জানানো হয়। এরপর তাদের ফরাসি অফিস দে প্রোটেকশন দে রেফুজিয়ে এট আপাত্রিদ (OFPRA) এ আবেদন জমা দিতে হয়, যেখানে তাদের ব্যক্তিগত পরিস্থিতি, বিপদের কারণ এবং দেশত্যাগের কারণ বিবেচনা করা হয়।

পরিসংখ্যান এবং বৃদ্ধি

সাম্প্রতিক তথ্য অনুযায়ী, ফ্রান্সে আশ্রয়প্রার্থীর সংখ্যা ২০১৮ থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে গড়ে প্রতি বছর ১০-১২% বৃদ্ধি পেয়েছে। ২০২৩ সালে প্রায় ১ লাখ ৫০ হাজারেরও বেশি আশ্রয় আবেদন জমা পড়েছে, যা আগের বছরের তুলনায় প্রায় ২০% বেশি। ফরাসি সরকার এসব আশ্রয় আবেদনগুলি সুষ্ঠুভাবে পর্যালোচনা করতে সক্ষম হলেও আবেদনকারীর সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে বেশি সময় লাগছে।

চ্যালেঞ্জ ও প্রশাসনিক ব্যবস্থা

ফ্রান্সের আশ্রয় প্রক্রিয়া প্রাথমিকভাবে প্রশাসনিক চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হচ্ছে, কারণ আবেদনকারীর সংখ্যা বেশি এবং যথাযথভাবে যাচাই করা সময়সাপেক্ষ। এ কারণে অনেক আবেদন প্রক্রিয়া সম্পন্ন হতে ৬ মাস থেকে এক বছর পর্যন্ত সময় লাগে। তবে, ফরাসি সরকার অনলাইন আবেদন প্রক্রিয়া উন্নত করা, নিরাপত্তা এবং অভ্যর্থনা কেন্দ্রের সংখ্যা বৃদ্ধি করা এবং কর্মীসংখ্যা বাড়ানোর মতো বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে যাতে প্রক্রিয়াটি দ্রুত সম্পন্ন হয়।

সামাজিক এবং অর্থনৈতিক প্রভাব

আশ্রয়প্রার্থীদের আগমন ফ্রান্সের সমাজে একটি উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলছে। এটি নতুন সাংস্কৃতিক, অর্থনৈতিক এবং সামাজিক পরিবর্তন নিয়ে এসেছে। ফ্রান্সে অনেক আশ্রয়প্রার্থী চাকরি খোঁজেন এবং তাদের সন্তানরা শিক্ষা গ্রহণ করে। ফলে স্থানীয় অর্থনীতি কিছুটা সক্রিয় হয়েছে, তবে সেই সাথে সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংহতকরণেও চ্যালেঞ্জ সৃষ্টি হয়েছে।

ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা

ফ্রান্সের সরকার আশ্রয়প্রার্থীদের জন্য নতুন পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে, যার মধ্যে অবৈধ অনুপ্রবেশ কমানো, আশ্রয় আবেদন প্রক্রিয়ার সময়সীমা কমানো এবং যথাযথ পুনর্বাসন পরিকল্পনা অন্তর্ভুক্ত। এছাড়া, ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে সমন্বয় করে ফ্রান্স আশ্রয় প্রার্থনার নীতিমালায় পরিবর্তন আনতে চাইছে যাতে অভিবাসন নীতি আরও কার্যকরী হয় এবং সমাজে শান্তি বজায় থাকে।

উপসংহার

ফ্রান্সে আশ্রয় আবেদনকারীদের সংখ্যা বাড়লেও সরকার তাদের জন্য একটি সহানুভূতিপূর্ণ এবং কার্যকরী ব্যবস্থা তৈরি করার জন্য কাজ করছে। তবে, প্রশাসনিক চ্যালেঞ্জ, সামাজিক সংহতকরণ এবং নিরাপত্তা ব্যবস্থা উন্নয়নে আরও উদ্যোগ গ্রহণ করা জরুরি।

Ajouter un commentaire

Commentaires

Il n'y a pas encore de commentaire.